হালচর্চা ডেস্ক ♦
সোহেল প্রতিদিন সঠিক সময়ে অফিসে যায়, তার দায়িত্বের কাজগুলো কখনই পড়ে থাকে না। প্রতিটি টাস্ক সে দিনেরটা দিনেই শেষ করে। কখনই সে ছুটির আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় না। এ নিয়ে তার অফিসে সুনামও আছে, তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেশ খুশি তার ওপর। তবে এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর যখন তার পরে জয়েন করা একজনকে প্রোমোশন দেয়া হলো তাকে দেয়া হলো না তখন সোহেলের টনক নড়লো। কী ভুল ছিল তার?
সোহেলের মতো আমরা অনেকেই মনে করি আমাদের দায়িত্বের কাজটুকু করলে ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে থাকলেই বুঝি ভালো এমপ্লোয়ি (Employee) হওয়া যায়। অথচ এর মাঝে এমন একটা ভুল আছে যা গোপনে আমাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দেয়! সোহেল এমন একটা পদ্ধতিতে কাজ করছিল যাকে নৌকার পাল তুলে দেয়ার সাথে তুলনা করা যায়।
“মাঝি নাউ ছাইড়া দে, ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে,গারে মাঝি গা, কোনো গান…’’ দেশাত্ববোধের এই গানে খুব সহজে বোঝা যাচ্ছে, নৌকার পাল তুলে দিলে মাঝির গান গাওয়ার ফুরসত মিলে! কারণ পালে বাতাস লেগে নৌকা নিজেই এগিয়ে যায়, এতে মাঝির বৈঠা বেয়ে এগোতে হয় না। সোহেলও ঠিক তাই করছিল– সে নিজেকে নেক্সট লেভেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেনি।
সোহেলের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার কথা, প্রথম দিকে তার দায়িত্ব পালনে এই সময়টুকু লেগেই যেতো। কিন্তু যখন সে একই রকম কাজগুলো প্রতিদিন করছিলো, ধীরে ধীরে সবই তার হাতের মুঠোয় চলে আসে। কোন কাজে কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেখানে কাকে কোন কাজ দিতে হবে, কী কখন কোথায় লাগবে ও পাওয়া যাবে সব কিছুই তার মুখস্ত হয়ে যায়। একটা সময় এই একই কাজগুলো করতে সোহেলের ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগতো কিন্তু সে এই বাড়তি সময়টা কাজে লাগাতে পারেনি। নেক্সট লেভেলে যাওয়ার জন্য যেসব স্কিল বা প্রযুক্তির সাথে অভ্যস্ত হওয়া দরকার সেগুলোতে সে মন দেয়নি। সে ভেবেছে কাজ হলেই তো হয়ে যাচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে সেটা তো ম্যাটার না। আর এই ভুল ভাবনাটিই নৌকার পাল তুলে দেয়া। নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার না করায়, নতুন প্রযুক্তি না শেখায় সোহেল তার ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ে। 🏃♂️
আসলে, প্রত্যেকটা ক্যারিয়ারেই এই নৌকার পাল তুলে দেয়া মডেলে কাজ করা সম্ভব। একজন অভিনেতা যদি প্রতিনিয়ত একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে যান, একটা সময় তাকে আর পছন্দ করবে না দর্শক। তাই সেই অভিনেতাকে প্রতিনিয়ত নতুন ও ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে হাজির করতে হবে নিজেকে। একজন কাঠমিস্ত্রীও যদি দোকান ভালো চলছে বলে, নতুন ডিজাইন রপ্ত না করেন এবং কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন কিছুদিন পর তার দোকানেও লালবাতি জ্বলবে। কারণ নতুন আইডিয়া, নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট না করলে এই প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা যায় না।
আপনি যদি নিজের ক্যারিয়ারে পাল তুলে দেয়া মডেলে কাজকর্ম করা শুরু করেন তাহলে ধরে নিন আপনার ক্যারিয়ার শেষ। হ্যা, আপনি কাজ করছেন, মাস শেষে একটা অংক ঢুকছে একাউন্টে কিন্তু সেটা আর ক্যারিয়ার নয় সেটা শুধুমাত্র একটা জব। তাই যদি ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পেতে চান, সবসময় নতুন কিছুর স্বাদ নিতে প্রস্তুত থাকুন, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সব আপনাকেই করতে হবে তা নয়, আপনার নিজের ক্যারিয়ারের জন্য যেসব স্কিল অতি জরুরী সেগুলো শিখে ফেলুন, নতুন প্রযুক্তি নতুন সিস্টেমে নিজেকে আপগ্রেড করুন। ভেবে দেখুন, একটা এন্ড্রয়েড ফোনেরই যদি সপ্তাহে সপ্তাহে আপডেট প্রয়োজন হয় আমাদের কেন নয়!