ভয়েস-অফ ভয়েস

দীপু মাহমুদ ♦
একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের শুটিং হবে। কীভাবে যেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর চলচ্চিত্রের এক নায়িকাকে ম্যানেজ করে ফেলেছে। এলেবেলে কোনো নায়িকা নয়। ঢালিউডের শাকিব খান, কলকাতার সিনেমার নায়ক দেব-য়ের সাথে অভিনয় করা তুখোড় নায়িকা। তাকে পাওয়ার পর আচমকা পাণ্ডুলিপি বদলে গেল। ঘটনা হয়ে গেল নায়িকা ফোকাসড।

আমি বাবা। নায়িকা আমার কন্যা। বাসা থেকে আমাদের শুটিং লোকেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভোর পাঁচটায়। মেক-আপ দিয়ে, কস্টিউম পরিয়ে শট দেওয়ার জন্য আমাদের রেডি করানো হলো। তখন বাজে সকাল এগারোটা।

আমার সংলাপ এসে দাঁড়িয়েছে ছয় শব্দে। তিনবার কাটা হয়েছে। আমি ঝিমুচ্ছি। বই পড়ি, ইমেইল চেক করি, ইমেইলের উত্তর লিখি, অনলাইনে খবর শুনি, ফেসবুকিং করি। নায়িকার অবসরে তার সাথে গল্প করি। তার নায়িকা হওয়ার গল্প শুনি। নামী নায়িকা হলেও সে অতি আন্তরিক মানুষ। সময় যায় না। রোজার সময়। দিন দীর্ঘ হতে থাকল। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। একসময় প্রচণ্ড অবসন্ন হয়ে পড়লাম।

ইফতারি করলাম। রাতের খাবার খেলাম। রাত সোয়া বারোটায় আমার ডাক পড়ল শট দেওয়ার জন্য। ফেসবুকে মাঈন হাসানের দেওয়া একটা স্ট্যাটাস আমাকে উজ্জীবিত করল। নাট্যজন শ্রদ্ধেয় অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়ের কথা, “অভিনেতা হচ্ছে মোমবাতি, জ্বলে জ্বলে ফুরিয়ে যাবে তবুও সে হাসবে কারণ সে আলো দেয়।”

হাসিমুখে শট দিলাম। কন্যার দিকে মধুর দৃষ্টিতে তাকালাম। তারপর শেষ শট। কন্যা আলতো করে আদর মাখানো হাতে পণ্য ছুঁয়ে বাবার কাছে আসবে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলবে, “থ্যাংক ইউ, বাবা।” তারপর ভয়েস ওভারে পণ্যের গুণগান চলবে। আমরা ধীরে ধীরে আউট অব ফোকাসে চলে যাব।

আমাদের মুখ হাসি-হাসি। পণ্য ছুঁয়ে এসে কন্যা আমাকে জড়িয়ে ধরে “থ্যাংক ইউ, বাবা” বলেছে। এখন শুরু হবে ভয়েস ওভার। পণ্যের গুণগান। আমরা অফ-ভয়েসে। কন্যাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, পণ্য পছন্দ হয়েছে, মা?

সে চোখমুখ ঝলমল করে বলল, খুউউউব।

মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বললাম, কিন্তু এই পণ্য আমরা কোনোদিন কিনব না, তাই না, মা?

একদম ঠিক কথা, বাবা। আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু ক্ষ্যাত না।

আমাদের তুমুল হাসির ভেতর ডিরেক্টর বললেন, পেয়ে গেছি, ওকে শট।

সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হুটহাট আর যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে কাজ করব না। লেখা নিয়ে আছি, লেখা নিয়ে থাকব। বিজ্ঞাপনে কাজ যদি করি বুঝেশুঝে করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুপ্রেরণা কাজকর্ম গল্পগুজব ভিতর-বাহির

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন: নতুন পেশা

হালচর্চা ডেস্ক ♦ বাংলাদেশে খুব শুরুর দিকে যারা ইন্টারনেট মার্কেটিং, বিশেষত এসইও নিয়ে কাজ করছেন আসিফ আনোয়ার পথিক তাদের অন্যতম। তবে ইদানিংকার ফ্রীল্যান্স-ভিত্তিক এসইও নয়, তিনি মুলত কাজ করেছেন কর্পোরেট-ভিত্তিক বিজনেস কন্সালটেন্সি নিয়ে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনডিপি এর যৌথ উদ্যোগে এটুআই প্রকল্পের সাথে ওয়েব অপ্টিমাজেশনের জন্য ন্যাশনাল কন্সালটেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন অনেকদিন। আসিফ আনোয়ার ইন্টারনেট […]

Read More
ওয়ার্কপ্লেস কাজকর্ম ভিতর-বাহির যাপন

নৌকার পাল তুলে দেয়ায় ক্যারিয়ার শেষ!

হালচর্চা ডেস্ক  ♦ সোহেল প্রতিদিন সঠিক সময়ে অফিসে যায়, তার দায়িত্বের কাজগুলো কখনই পড়ে থাকে না। প্রতিটি টাস্ক সে দিনেরটা দিনেই শেষ করে। কখনই সে ছুটির আগে অফিস থেকে বেরিয়ে যায় না। এ নিয়ে তার অফিসে সুনামও আছে, তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বেশ খুশি তার ওপর। তবে এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর যখন তার পরে জয়েন […]

Read More
Uncategorized অনুপ্রেরণা কাজকর্ম ভিতর-বাহির স্টার

বাংলা র‍্যাপ: বিটের তালে সিধাসাদা কথা

রওশন আরা মুক্তা ♦ একুশ শতকের প্রথম দশকেই নতুন স্বাদের যে গান বাংলা ভাষাভাষিদের চাঙ্গা করেছে তা হলো বাংলা র‍্যাপ। নিউইয়র্ক বেজড স্টোয়িক ব্লিসের ‘আবার জিগায়’ নামের হিপহপ ঘরানার গানটি রিলিজের সাথে সাথেই শ্রোতাদের প্লে লিস্টে উঠে আসে; তবে প্রচুর ইংরেজি শব্দের ব্যবহারের কারণে একে পুরোপুরি বাংলা র‍্যাপ বলা যাবে না। একই ধারাবাহিকতায় ‘দেশি এমসি’জ’ ‘ব্যানড’ […]

Read More